খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে সচারাচরই রান্নায় ব্যবহার করা হয় আদা। তবে শুধু স্বাদ বৃদ্ধিই নয়; বরং এই খাদ্য উপাদানটির রয়েছে স্বাস্থ্যগত নানা উপকারিতা।
প্রায় ৪ হাজার বছর আগেও রান্নায় আদা ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। তবে চীনের মতো এলাকায় দুই হাজার বছর আগেও চিকিৎসার কাজে আদা ব্যবহার করা হতো।
এ সম্পর্কে নিউট্রিশন কনসালটেন্ট ভিভিয়ান চেন বলেন, “আদা মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবহার করা হতো। তবে বর্তমানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু রয়েছে এমন সকল স্থানেই আদার চাষ করা হয়।”
খাবারে আদা নামে আমরা যা ব্যবহার করি সেটি মূলত গাছটির মূল। এই মূলটি কেটে সিদ্ধ করে কিংবা রস তৈরি করে খাবারে ব্যবহার করা হয়। এমনকি চা তৈরিতে আদা প্রায়শই ব্যবহার করা হয়।
শুকনো কিংবা পাউডারকৃত আঠা আবার ক্যাপসুল আকারে গ্রহণ করা হয়। আদার তেল আবার উদ্ভিদ থেকে আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হয়। এটি অনেকে খাবা হিসেবে কিংবা অনেকে ত্বকের যত্নেও ব্যবহার করতে পারে।
এ সম্পর্কে নিউট্রিশন কনসালটেন্ট জেন মেসার বলেন, “মসলা হিসেবে আদা বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এটি নানা কাজে ব্যবহার করা যায়।”
স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বিবেচনা করলে আদায় রয়েছে জিঞ্জেরল ও শোগাওল নামের বায়ো-অ্যাকটিভ কমপাউন্ড। এগুলো দেহে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
আদা মূলত মোশন সিকনেস কিংবা কেমোথেরাপি সম্পর্কিত বমি বমি ভাব দূরেও কাজ করে। একইসাথে নারীদের ঋতুস্রাব কিংবা আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে বেশ কার্যকরী।
ভিভিয়ান চেন জানান, আদা হজমে সাহায্য করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানের প্রফেসর লিসা ইয়াং জানান, আদা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আর জেন মেসার বলেন, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে, পেশির ব্যাথা কমাতে আদা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি অনুমান করা হয় যে, আদার কারণে যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। তবে এটি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের মায়ো ক্লিনিকের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট জেমি বেরিং বলেন, “দেহে আদার প্রভাব নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে কিছু গবেষণায় এর উপকারিতা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।”
জেমি বেরিং জানান, দৈনিক ঠিক কী পরিমাণ আদা খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত একজন ব্যক্তিকে খাবারের সাথে দৈনিক সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম আদা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে দৈনিক আদা গ্রহণের সর্বোচ্চ পরিমাণ ১ গ্রাম পর্যন্ত বলা হয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে দুই বছর বয়সের আগে আদা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
লিসা ইয়াং বলেন, “প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ যদি দৈনিক ৪ গ্রামের বেশি আদা খায় তবে বুক জ্বালা ও ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
আর জেন মেসার সতর্ক করেন যে, বেশি পরিমাণে আদা গ্রহণের ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। এমনকি অল্প পরিমাণে আদা গ্রহণের ফলেও দেহে চলমান ঔষধের সাথে সেটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
জেন মেসার বলেন, “ঠিক কী পরিমাণ আদা খাবেন সেটা আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ওষুধ কিংবা বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবস্থার সাথে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়া বিবেচনা করা চিকিৎসক সেটি নির্ধারণ করে দেবেন।”
সূত্র- ইউএসএ টুডে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ