সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময়ই ডায়াবেটিক রোগীদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। একে বলা হয় ‘প্রি কনসেপশনাল কেয়ার’। সন্তান নেওয়ার আগেই ডায়াবেটিক রোগীদের যে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে—
- ব্লাড সুগার যেন ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিগত তিন মাসের ডায়াবেটিসের গড় (এইচবিএওয়ানসি) যেন ৬.৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকে, কোনো হাইপোগ্লাইসেমিয়া ছাড়া।
- ডায়াবেটিস ভালো নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত কার্যকর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিতে হবে।
- ডায়াবেটিস থেকে কোনো জটিলতা যেমন—চোখে ঝপসা দেখা, কিডনিতে সমস্যা, নার্ভে সমস্যা হচ্ছে কি না আগেই দেখে নিতে হবে।
- যাঁরা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন তাঁদের থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা (টিএসএইচ) পরীক্ষা করাতে হবে এবং ২.৫ মিলিলিটারের নিচে রাখতে হবে।
- রোগীদের শেখাতে হবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখায় কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ খাবার-ব্যায়াম।
বাসায় কিভাবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে, ইনসুলিন কিভাবে দেবেন, ইনসুলিনের ডোজ কিভাবে অ্যাডজাস্ট করবেন তা ডাক্তার শিখিয়ে দেবেন।
- ডায়াবেটিস বেশি কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কী করতে হবে তা-ও বলে দেবেন আপনার ডাক্তার।
- বাচ্চার মায়ের কী ধরনের জটিলতা হতে পারে, সে ব্যাপারে ডাক্তার ধারণা দেবেন।
- জন্মের পরপরই বুকের দুধ নিশ্চিত করতে হবে, যেন বাচ্চার হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়।
- যেসব মায়ের ওজন বেশি, তাঁদের ওজন কমাতে হবে খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
- যেসব মা গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের জন্য ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে হবে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
ওষুধের পর্যবেক্ষণ ও ডোজ ঠিক করা
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময়ই (অন্তত তিন মাস আগে) মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিসের ওষুধ পরিবর্তন করে ইনসুলিনে চলে যাওয়া ভালো।
- গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় কিছু উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এবং কোলেস্টেরলের ওষুধ পরিবর্তন করতে হতে পারে।
- চোখের কোনো সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি) এবং কিডনির সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি) আছে কি না আজই পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ডায়াবেটিক মায়ের যে জটিলতাগুলো হতে পারে—
- বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া (অ্যাবরশন)
- প্রি-একলাম্পশিয়া (প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাওয়ায় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া)
- গর্ভকালীন খিঁচুনি
- বিলম্বিত ডেলিভারি (প্রো লং লেবার), সিজারিয়ান ডেলিভারি লাগতে পারে।
- অতিরিক্ত রক্তচাপ
- প্রসব-পরবর্তী ইনফেকশন
বাচ্চার যেসব সমস্যা হতে পারে
- বড় বাচ্চা হওয়া
- বাচ্চার হাইপোগ্লাইসেমিয়া, জন্ডিস
- জন্মগত ত্রুটি
মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেই যে সিজার লাগবে, এমন নয়। সব কিছু ভালো থাকলে নরমাল ডেলিভারিও সম্ভব। নিয়মিত প্রসূতিবিদের পাশাপাশি হরমোন বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকলে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে জটিলতা হ্রাস করা সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম
রিপ্রডাক্টিভ এন্ডোক্রাইনোলজি ও ইনফার্টিলিটি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ