।। বিনতে জাহাঙ্গীর ।।
শেষ বিকেলে জানালার ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল ফারহাত (ছদ্মনাম)। সারাদিন আজ ঈদটা বাসায়ই কেটে গেল । ভাবছিল, ভাইয়া কত্তো মজা করলো তার উস্তায আর বন্ধুদের নিয়ে! পিৎজা খেলো! আর আমার বান্ধবিটা ঘুমিয়েই দিন পার করলো!
সবাই আজ ঈশার পর পরই ঘুমিয়ে গেল। ফারহাতও তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে এলো প্রায়। হঠাৎ পাশের কামরা হতে ভাইয়ার ডাকে ঘুম ভাঙল।
: জি ভাইয়া!
: কার আইডি হতে যেন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে বইয়ের লেখা দিয়েছিলি, তিনি কি আছেন বাসায়? বলল রাফাত।
: জি আছেন। কেন ভাইয়া? কিছুটা অবাক জিজ্ঞাসা ছোট বোন ফারহাতের।
: ‘ফেইসবুকে সে আইডিতে কয়েকজন হক্কানী আলেম ও কিছু বুকশপ এ্যাড করা বোধয়। তুই তাদের লেখা সুযোগ পেলে পড়তে পারিস। কোন ছেলের আইডিতে লাইক, কমেন্ট করবি না যেন। এবার যেতে পারিস।
: এটা বলতেই ডেকেছি।’ বলল রাফাত।
কিছু না বলে নিজ কামরায় ফিরে এলো ফারহাত । আগেই মনটা বিষণ্ন ছিল। ভাইয়ার কথাগুলো শুনে কেঁদে ফেলল। ভাবল- ভাইয়া এগুলো কেন বললো আমায়?! আমি কি এমন করেছি! কিছুই তো করিনি।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
ভয়ে, মনোবেদনায় সত্যি সত্যি জ্বর এসে পড়লো ফারহাতের। ঘুমও ভাল হল না।
সকালে ভাইয়া খেয়াল করলেন বোনটা চুপচাপ।
: কিরে আপু, তোর কি হয়েছে?
: কিছু না।
: বল না কি হয়েছে?
: কাল আমাকে এগুলো বললে কেন ডেকে? আমি কি এমন করেছি? কোন ছেলেকেইবা কমেন্ট করেছি?
: আচ্ছাহ! এজন্য তুই অভিমান করেছিস? হা হা হা…
আমি তো ফোন ধরিই না বেশি। ঐ আপুটা এলে একটু দেখি কয়েকজন বিদগ্ধ আলেমের চিন্তাশীল লেখা। আমি ওয়াজও শুনি না তেমন। শুনলেও নযর ঘুরিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। গজল তো শুনিই না তেমন। কারণ, মাওলানা আতিকুল্লাহ সাহেবের লেখায় পড়েছি, এই হালাল সুরগুলোও তিলাওয়াত হতে গাফেল করে দেয় আমাদের । তাই ভয় লাগে।
: ওয়াল্লহি! নাটক, গান ইত্যাদি তো কক্ষনো দেখি না। আর আমাকে কি বললে কাল!
: আরে পাগলি বোন আমার! তুই অভিমান কেন করছিস! আমি তো জানি আমার বোনটা উল্টাপাল্টা কিছু দেখে না।
শোন! তুই মনে হয় আমার ফোন হতে কমেন্ট করেছিলি কোন দীনি লেখায়। কমেন্টটা অনেকে লাইক করেছে, ভাল মন্তব্য করেছে। তোর উস্তাযে মুহতারামও তো বলেছেন, তোর লেখায় অন্যরকম নূরানিয়াত আছে। এজন্য তোকে বলছি তুই ভালো জায়গায়ও কমেন্ট করিস না বুঝলি! অনেকে ঐ আইডিতে বিরক্ত করতেও পারে।
দুনিয়ার অবস্থা তো এখনো তুই বুঝিসনি পুরোপুরি। চারদিকে যে কত ফেতনা! তুই যেমন সরল ভাবনা ভাবিস, দুনিয়াটা এতো সহজ নয় বোন। আরো যখন বড় হবি, তখন ঠিকই একদিন বুঝবি যে, ভাইয়া কেন এত সতর্ক করেছিল! আমি চাই আমার বোনটা ফুলের মতই পবিত্র থাকুক সবসময়। এই নে এই লেখাটা রেখে দে ডায়েরির প্রথম পাতায়, ভায়ের উপদেশ হিসেবে সারাজীবন।
ফারহাত লাজুক হাতে ভাইয়ার হাত হতে কাগজটা নিলো এবং পড়তে লাগল দরদমাখা উপদেশগুলো-
“বোন! আমি তোকে আবারো সতর্ক করছি, এটা ফেসবুক জগত, এখানে গায়রে মাহরাম হতেও দূরে থাকবি। আইডিতে গায়রে মাহরাম রাখা, তাদের সাথে কথা বলা, ইনবক্সে যাওয়া কোনটাই ঠিক না। ২০১৯ সাল হতে ফেসবুক চালাই। জানা আছে ভালো, শেষ পর্যন্ত কি ঘটে!
গায়রে মাহরাম হতে দূরে থাকবে বোন! তাদের লেখা পড়লে সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের আইডিতে রাখা, ইনবক্সে কথা বলা শীঘ্রই ফেতনায় ফেলবে। আর গায়রে মাহরামের পোস্টে কমেন্ট করাও ঠিক না…।
আর লিখতে চাই না, যা লিখছি আশা করি বুদ্ধিমতী তুই বুঝবি, ইনশাআল্লাহ। পরবর্তীতে আরো বুঝবি… সারাজীবন মনে রাখবি ভায়ের কথাগুলো..”।
হাসোজ্জ্বলতা ফিরে এলো ফারহাতের মুখে। অবনত মস্তকে লাজনম্র কণ্ঠে বলল- “জাযাকাল্লাহু খাইরান, ভাইয়া এত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি সত্যি অনেক আনন্দিত তোমার মত এক কল্যাণকামী ভাই পেয়ে। শোকরিয়া হে ভাইয়া (রাফাত)।”
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ