Home ইসলাম জমজম কূপ থেকে উদ্ধার হওয়া সোনার হরিণ

জমজম কূপ থেকে উদ্ধার হওয়া সোনার হরিণ

 কাসেম শরীফ

মহানবী (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব এক রাতে স্বপ্ন দেখেন, তাঁকে জমজম কূপ খননের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং স্বপ্নযোগে তার স্থানও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তারপর ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি খননকাজ শুরু করে দেন। খননকাজ চলাকালে কূপ থেকে কিছু জিনিস উত্তোলন করা হয়। সম্ভবত বনু জুরহুম গোত্র মক্কা ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে কূপের এসব জিনিস নিক্ষেপ করেছিল।

নিক্ষিপ্ত দ্রব্যের মধ্যে ছিল কিছুসংখ্যক তলোয়ার ও লৌহবর্ম এবং দুটি সোনার হরিণ। আবদুল মুত্তালিব তলোয়ারগুলো দ্বারা কাবাগৃহের দরজা ঢালাই করেন, সোনার হরিণ দুটি দরজার সঙ্গে সন্নিবেশিত করে রাখেন এবং হজযাত্রীদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা করেন। [সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহ.), আর-রাহিকুল মাখতুম]

জমজম কূপ খননকালে কুরাইশরা দাবি করে, খননকাজে তাঁদেরও অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। আবদুল মুত্তালিব বলেন, ‘যেহেতু এ কূপ খননের জন্য তিনি স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়েছেন, সেহেতু এ খননকাজে তাঁদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে না।

কিন্তু অন্য কুরাইশরাও ছাড়ার পাত্র নয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাঁরা বনু সাদ গোত্রের এক ভবিষ্যদ্বক্তা নারীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু পথের মধ্যে তাঁরা এমন কতিপয় নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন, যাতে তাদের কাছে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায়, মহান আল্লাহ জমজম কূপের খননকাজ আবদুল মুত্তালিবের জন্যই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই তাঁরা আর অগ্রসর না হয়ে মক্কায় ফিরে আসে।

আরও পড়তে পারেন-

এ পরিপ্রেক্ষিতেই আবদুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন যে আল্লাহ তাআলা যদি অনুগ্রহ করে তাঁকে ১০টি পুত্রসন্তান দান করেন এবং সবাই বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে জীবনের এ স্তরে গিয়ে পৌঁছে যে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে সক্ষম, তাহলে তিনি তাঁর একটি সন্তানকে বায়তুল্লাহর জন্য উৎসর্গ (কোরবানি) করবেন। (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৭)

আবদুল মুত্তালিব ছেলেদের মধ্যে কাকে কোরবানি করা যায়—এ ব্যাপারে লটারি দেন। লটারিতে আবদুল্লাহর নাম উঠে যায়। আবদুল মুত্তালিব আবদুল্লাহর হাত ধরে তাঁকে নিয়ে যান কাবার কাছে। তাঁর হাতে ছিল জবেহ করার ধারালো অস্ত্র।

কিন্তু কোরাইশদের মধ্যে বনু মাখজুম অর্থাৎ আবদুল্লাহর নানা গোষ্ঠীর লোকজন এবং আবদুল্লাহর ভাই আবু তালিব এ ব্যাপারে তাঁকে বাধা প্রদান করেন।

মানত পূরণের  বিকল্প পদ্ধতি জানতে আবদুল মুত্তালিব জনৈক তত্ত্ববিশারদের পরামর্শ চান। তিনি আবদুল্লাহ এবং ১০টি উটের মধ্যে নির্বাচনগুটিকা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। নির্বাচনী গুটিকায় যদি আবদুল্লাহর নাম উঠে যায় তাহলে ১০টি উটের সঙ্গে আরো ১০টি উট যোগ করে নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করতে হবে যে পর্যন্ত না আবদুল্লাহর নামের স্থানে ‘উট’ কথাটি প্রকাশিত হয় সে পর্যন্ত একই ধারায় নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করে যেতে হবে, যতক্ষণ না আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যান। তারপর উটের যে সংখ্যা নির্ধারক নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করা হবে সেই সংখ্যক উট আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতে হবে। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবদুল মুত্তালিব, আবদল্লাহ ও ১০টি উটের মধ্যে নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে আবদুল্লাহর নামই প্রকাশিত হয়।

তত্ত্ববিশারদের নির্দেশ মোতাবেক দ্বিতীয় দফায় উটের সংখ্যা আরো বেশি বৃদ্ধি করে তিনি নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করেন। কিন্তু এতেও আবদুল্লাহর নামই উঠে যায়। কাজেই পরবর্তী প্রত্যেক দফায় ১০টি উটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তিনি নির্বাচনী গুটিকা ব্যবহার করে যেতে থাকেন। এ ধারায় চলতে চলতে যখন এক শ উট এবং আবদুল্লাহর নাম নির্বাচনী গুটিকায় ব্যবহার করা হয়, তখন উট কথাটি প্রকাশিত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল মুত্তালিব আবদুল্লাহর পরিবর্তে ১০০ উট আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন। আর এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি দুই জবেহ (উৎসর্গকৃত)-এর সন্তান, একজন ইসমাঈল (আ.) এবং অন্যজন আমার পিতা আবদুল্লাহ।’ (রহমাতুল্লিল আলামিন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯-৯০)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।