।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।
আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। সেই ইবাদতের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল হজ্জ, যা প্রত্যেক মুসলিম, প্রাপ্তবয়স্ক, সামর্থবান ব্যক্তির উপর ফরয বা আবশ্যকীয় বিধান। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন-
অর্থাৎ- “আর এঘরের হজ্জ করা মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার”। এ ব্যাপারে হাদীসে পাকের মধ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
অর্থাৎ- হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জকে ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করে নাও। অন্য এক হাদীসে আল্লাহর নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-
অর্থাৎ- “ইসলাম হলো! তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে এবং ওমরাহ করবে, জানাবাতের গোসল করবে, পরিপূর্ণভাবে ওজু করবে এবং রমযানে রোযা রাখবে”।
অর্থাৎ- হযরত ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন- আমার ইচ্ছা হয়! এই শহরগুলোতে কিছু লোক পাঠিয়ে দেই এবং তারা দেখবে যে, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কারা হজ্জ আদায় করে না। সুতরাং তাদের উপর কর নির্ধারণ করে দিবে। কারণ, তারা তো মুসলমান নয়; তারা তো মুসলমান নয়।
মুসলিম নারীদের উপরও হজ্জ ফরয
নারী-পুরুষ উভয় মিলে হলো মানব জাতি। একটি ছাড়া অন্যটি থাকে অসম্পূর্ণ। সুতরাং ইসলামের মৌলিক আহকামাতের ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যয় মহিলারাও বরাবর অংশিদার। তাই তো কুরআন শরীফের যে সব জায়গায় মৌলিক কোন হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা কেবল মাত্র পুরুষ নয়, বরং নারী জাতিকেও শামিল করে।
হাদিস শরীফে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ বর্ণিত আছে-
অর্থাৎ- হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের নিকট আরয করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), মহিলাদের উপরও কি কোন জিহাদ আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- তাদের উপর এমন জিহাদ রয়েছে যার মধ্যে কোন মারামারি নেই, অর্থাৎ হজ্জ এবং ওমরাহ। (ইবনে মাজাহ, আহমাদ)।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
নাবালেগ বাচ্চাদের হজ্জের হুকুম
নাবালেগ বাচ্চাদের উপর হজ্জ ফরয নয়। কিন্তু যদি কোন নাবালেগ বাচ্চা হজ্জ আদায় করে, তাহলে তার হজ্জ বৃথা যাবে না। বরং তার সাওয়াব তার মাতা-পিতা পাবেন। যেমনটি হাদীসে পাকের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
অর্থাৎ- হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একটি বাচ্চা নিয়ে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসূল (সা.), এই বাচ্চার জন্যও কি হজ্জ আদায় করতে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন! হ্যাঁ, (এর জন্যও হজ্জ আছে) এবং তুমি তার সাওয়াব পাবে। (মুসলিম শরীফ)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
অর্থাৎ- হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযিদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাত বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমাকে হজ্জ করানো হয়েছে। (বুখারী শরীফ)।
মাসআলাঃ যদি কোন শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে হজ্জ আদায় করে থাকে, তবে সেই শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি তার উপর হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া যায়, তখন পুনরায় তাকে ‘ফরয’ হজ্জ আদায় করে নিতে হবে। শিশু বয়সের আদায়কৃত হজ্জ-এর বিনিময়ে তার হজ্জের ফরয বিধান বা কর্তব্য পালন হবে না।
লেখক: প্রখ্যাত মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং সহকারী পরিচালক, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ