টাইপ-১ ডায়াবেটিস
শিশুর অগ্ন্যাশয় যখন প্রয়োজনমাফিক ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তখন শিশু এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এই রোগের প্রধান উপসর্গগুলো হলো অতিরিক্ত জলতৃষ্ণা, বেশি ক্ষুধা, বেশি প্রস্রাব এবং ওজন কমতে থাকা। শিশু-কিশোর বয়সে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি অটোইমিউন প্রকৃতির। যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ‘বহিরাগত’ চিহ্নিত করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে।
ডায়াবেটিস থেকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে; যেমন—কিডনির সমস্যা, নার্ভের ক্ষতিসাধন, অন্ধত্ব, অল্প বয়সে করোনারি হার্টের ঝুঁকি প্রভৃতি।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন নিঃসরণ ঠিক থাকার পরও নিঃসৃত ইনসুলিন কোনো কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। মেদবহুল অতিরিক্ত ওজনের শিশু-কিশোরদের এ ধরনের ডায়াবেটিস বেশি হতে দেখা যায়। গবেষণায় প্রমাণিত, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিন প্রতিরোধী ভূমিকা পালন করে।
এই ডায়াবেটিসের রোগ উপসর্গ ও লক্ষণাদি টাইপ-১ ডায়াবেটিসের অনুরূপ। আক্রান্ত শিশু-কিশোরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তনসহ ব্যায়াম ও ওষুধের সাহায্য নিতে হয়, কখনো বা নিতে হয় ইনসুলিন ইনজেকশনও।
গ্রোথ হরমোনের সমস্যা
শিশুর শরীরে বেশি মাত্রার গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হলে অস্থি ও মাংসপেশি এত বেশি বাড়বাড়ন্ত হয়ে ওঠে যে জাইগানটিজম অসুখ দেখা দেয়। এটি সাধারণভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমারজনিত কারণে হয়ে থাকে।
এই টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে সারিয়ে নেওয়া হলে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড যদি যথাযথ পরিমাণে গ্রোথ হরমোন তৈরি না করে, তবে শিশুর উচ্চতা স্বাভাবিক হয় না। সে বামন শিশু হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শিশুর শরীরে গ্লুকোজের মাত্রাও কম থাকে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
হাইপারথাইরয়েডিজম
শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অত্যধিক হলে এই অবস্থার সূচনা হয়।
ওজন কমতে থাকা, অস্থিরতা, হাত-পায়ের কাঁপুনি, অতিরিক্ত হার্টরেট ও রক্তচাপ, অতিরিক্ত ঘর্ম, চোখ দুটি কোটর থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা, গলার সম্মুখে গ্ল্যান্ড স্ফীতি প্রভৃতি হলো এই অসুখের লক্ষণ।
বাচ্চাদের এই রোগ প্রধানত ‘গ্রেভিস ডিজিজ’ নামে পরিচিত। এখানে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রতি শরীরের বিধ্বংসী ইমিউনিটি সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠে। ওষুধে বা থাইরয়েড গ্রন্থি অপারেশন/রেডিয়েশনের সাহায্যে এই রোগ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব।
হাইপোথাইরয়েডিজম
এখানে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা খুব নিচুতে থেমে যায়। ক্লান্তি, হার্টরেট কমে যাওয়া, খসখসে ত্বক, ওজনে বাড়া, কোষ্ঠবদ্ধতা এবং শিশুর বাড়ন ও বয়ঃপ্রাপ্তিতে সমস্যা—এসব দেখা যায়। হাইথাইরয়েডাইটিস অসুখে অটোইমিউন কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি বিনষ্ট হয় এবং গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণে বাধা পায়। এ রোগ সচরাচরভাবে শিশু বয়সে হয়ে থাকে। শিশুতে যদি জন্মকাল থেকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড না থাকে বা অবিকশিত থাকে, তবে শিশুতে হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়। মুখে খাওয়ার থাইরয়েড হরমোন ওষুধের সাহায্যে এটি নিরাময় করা যায়।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ